স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:০৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫ বার
রাইপুরে দেখা গেল এক নিখুঁত ওয়ানডে ক্ল্যাসিক। ভারতের ৩৫৮ রানের বিশাল স্কোর, দুই সেঞ্চুরির ইনিংস সবকিছুকে ছাপিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা উপহার দিল আরও বড় গল্প। অধিনায়ক এইডেন মার্করামের ১১০ রানের অনবদ্য সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে ব্রিটস্কে-ব্রেভিসদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং সব মিলিয়ে ৪ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল প্রোটিয়ারা।
ম্যাচের শুরুতে লক্ষ্য ছিল কঠিন, ৩৫৯ রান। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং কেবল লক্ষ্য তাড়া করেনি, বরং ম্যাচকে করেছে রোমাঞ্চে ভরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই কুইন্টন ডি কক মাত্র ৮ রানে আউট হলে পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে মার্করামের কাঁধে। কিন্তু তিনি সেটিই উপভোগ করেছেন সবচেয়ে বেশি। তার ব্যাটিংয়ে ছিল নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন। ৯৮ বলে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ১১০ রানের দুর্দান্ত নেতৃত্বমূলক ইনিংস।
জাইসওয়াল বা রানার মতো ফিল্ডারদের দ্রুত ক্যাচ তুলে দেওয়া ব্যাটারদের বিপরীতে মার্করাম ছিলেন ধৈর্যশীল। চাপের মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়ে খেলার সঠিক সময় বেছে নিয়েছেন। তার উইকেটের পতন ভারতকে কিছুক্ষণের জন্য আশায় রাখে, কিন্তু ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই এগিয়ে।
অধিনায়কত্ব ছাড়লেও ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল ছিলেন টেম্বা বাভুমা। ৪৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংসটি বড় মনে নাও হতে পারে, কিন্তু প্রয়োজনীয় সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আর সিঙ্গেল-ডাবলের ধারাবাহিকতা দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানে রাখে।
এরপর আসেন ম্যাচের টাইম টার্নার ম্যাথিউ ব্রিটস্কে। ভারতের স্পিনারদের বিপক্ষে ৬৪ বলে ৬৮ রানের নিয়ন্ত্রিত অথচ কার্যকর ব্যাটিং পুরো ম্যাচের গতি বদলে দেয়। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার কাছে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতের বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথা।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল স্কোরবোর্ড দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার। ব্রেভিস সেটা ভালোভাবেই করলেন। মাত্র ৩৪ বলে ৫৪ রানের ধুন্ধুমার ইনিংসে ছিল ১ চার ও ৫টি ছক্কার দৃষ্টিনন্দন মার। ভারতীয় স্পিন অ্যাটাকে তিনি যেভাবে ছক্কা হাঁকিয়েছেন, তা ম্যাচকে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেই টেনে নেয়।
টনি ডি জর্জি চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরার পর ম্যাচে সামান্য শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু করবিন বোশ এসে তা ভুল প্রমাণ করেন। মাত্র ১৫ বলে ২৯ রানে ম্যাচটিকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তিনি। তার ব্যাট থেকে একের পর এক দুর্দান্ত বাউন্ডারি বেরিয়ে আসছিল।
অন্য পাশে কেশব মহারাজ ঠাণ্ডা মাথায় থেকে সিঙ্গেল নেন এবং নিশ্চিত করেন যে ম্যাচ আর হাতছাড়া না হয়। ৪৯.২ ওভারে ৩৬২ রানে জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে শুরু হয় উল্লাস।
৩৫৮ রানের বিশাল স্কোর করার পর ভারত অবশ্যই নিজেদের ফেভারিট ভাবতে পারত। কিন্তু বোলাররা ব্যর্থ। আর্শদীপ–প্রসিদ্ধ সফল হলেও ধারাবাহিকতা ছিল না। কুলদীপের লুপ ও ভ্যারিয়েশনও আজ কাজে আসেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা শুরু থেকেই ভারতের বোলারদের নিজের পরিকল্পনায় খেলতে দেননি।
এদিকে, ইনিংসের শুরুতে টপ অর্ডারের ব্যাটারদের উপহার দেয়া দারুণ ইনিংসে বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। ইনিংসের শুরুটা যদিও রঙিন ছিল না। ইয়াশস্বী জাইসওয়াল (২২) ও রোহিত শর্মা (১৪) দ্রুত ফিরলে চাপে পড়ে ভারত।
তবে দুই অভিজ্ঞ বিরাট কোহলি ও রুতুরাজ গায়কোয়াড় মিলে খাদের কিনারা থেকে দলকে উদ্ধার করেন। কোহলি খেলেছেন ধীরস্থির কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ছন্দে ৯৩ বলে দুর্দান্ত ১০২ রানের ইনিংস। তার সঙ্গী গায়কোয়াড় আরও আক্রমণাত্মক, ৮৩ বলে ১০৫ রানের অসাধারণ চাকচিক্যময় সেঞ্চুরি তুলে নেন। এই জুটির ব্যাটে ভারত মাঝপথে ফিরে পায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ।
শেষদিকে অধিনায়ক-উইকেটকিপার কে এল রাহুল ইনিংসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। মাত্র ৪৩ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় তার ৬৬* রানের দাপট ভারতকে এনে দেয় ৩৫৮ রানের সংগ্রহ। ধারাবাহিকতা দেখান রবীন্দ্র জাদেজাও (২৪*)।
তবে রেকর্ড গড়া স্কোরও হার থেকে রক্ষা পেল না। ৩৫৯ রানের কঠিন টার্গেট সামনে পেয়েও ভীত না হয়ে প্রতি-আক্রমণে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেনার থেকে মিডল অর্ডার সবাই অবদান রাখায় রান তাড়া সহজ হয়। শেষ পর্যন্ত ৪৯.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৬২ রান তুলে তারা। এর ফলে রোমাঞ্চকর জয় নিয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরে মাঠ ছাড়ে প্রোটিয়ারা।