ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:০৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮ বার
লাখো কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত একটি নাম খালেদা জিয়া, যাঁর জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী। এই মহীয়সী নারী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আর বাইরে তাঁর সুস্থতার জন্য মানুষের উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ-ক্রন্দন-মোনাজাত চলছে। মানুষ রোজা রাখছে।
হাসপাতালের বাইরে অগণিত মানুষের আগ্রহ মাকে একনজর দেখা। ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক। তাঁর অসুস্থতা জাতিকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা, মমত্ববোধ, অকৃত্রিম ভালোবাসা, সম্মান, মর্যাদা, যা তাঁকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
জীবন্ত কিংবদন্তি দেশনেত্রী খালেদা জিয়াতাঁকে যেদিন এক কাপড়ে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে স্বৈরাচারী সরকার বের করে দিয়েছিল, সেদিন তাঁর চোখের পানি সারা পৃথিবীর মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে, যা ছিল হৃদয়বিদারক। হৃদয়হীন, বিবেকহীন ও দয়া-মায়াহীন মানুষ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে তিনি তাঁর জীবনের এক করুণ অধ্যায়ের কথা দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কম বয়সে স্বামী হারিয়েছি।
কারাগারে থাকতে আমি আমার মাকে হারিয়েছি। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমি ছোট ছেলেকে হারিয়েছি। আরেকটি সন্তান নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে দূরদেশে। আমার এই স্বজনহীন জীবনে দেশবাসী আমার স্বজন।’
এক-এগারোর সরকার তাঁকে মাইনাস করার হীন চক্রান্ত করেছিল, যা ছিল জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
তাঁর সন্তানের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। তারা আজ কোথায়? মানুষ তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। পক্ষান্তরে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকামী সব মানুষের হৃদয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দেদীপ্যমান হয়ে আছেন।
সর্বোপরি শেখ হাসিনা সরকার ঈর্ষান্বিত হয়ে বিনা দোষে শারীরিক ও মানসিকভাবে তাঁকে নির্যাতন করেছে। জাতিকে কাঁদিয়েছে। তাঁর প্রতি হৃদয়হীন আচরণ এবং বিষক্রিয়ায় তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় করার হীন কৌশল নেওয়া হয়েছিল, যার পরিণতি আজ খালেদা জিয়াকে ভোগ করতে হচ্ছে। হাসপাতালে তিনি আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে।
বেগম জিয়া অসুস্থ শরীর নিয়ে ২৩ নভেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাঁকে ২৭ নভেম্বর আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পুরো জাতি শোকে মুহ্যমান। অনেকে ফুসফুস, কিডনি দিতে আগ্রহী। ফুসফুস দিলে তিনি যদি বেঁচে যান, ১৮ কোটি মানুষের উন্নয়ন ঘটবে, জনগণ উপকৃত হবে। এগুলো তাঁর প্রতি মানুষের গভীর মমত্ববোধ, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ, যা তিনি অর্জন করেছেন দেশের মানুষকে ভালোবেসে।
বেগম জিয়া ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। স্বৈরাচারী এরশাদ ও হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। কোনো লোভ-লালসা, প্রলোভন তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি আপসহীন নেত্রী। তিনি নির্লোভ, নিষ্পাপ এবং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর প্রতি রয়েছে জাতির গভীর ও অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাঁর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
২ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দুটি সন্তান নিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হন। আর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গনে। স্ত্রী-পুত্রের মায়া ত্যাগ করে তিনি জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য যুদ্ধ করেছেন। খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানের জান্তা সরকার মানসিক যন্ত্রণায় রেখেছিল। অথচ শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির এক বাড়িতে ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রেশন নিয়েছেন। নিরাপত্তা পেয়েছেন। এমনকি সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়েছে সেনানিবাসের হাসপাতালে। সারা জীবন দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে যে মহান মানুষটি সংগ্রাম করেছেন, আজ তিনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।
১৯৮১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে যাচ্ছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা। শেখ হাসিনার আমলে বিনা দোষে কারাভোগের সময় তাঁর প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। চরম অবহেলায় রাখা হয়েছে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর সুস্থতার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করে যাচ্ছেন। কোরআনের পাখি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ আলেম-ওলামারা তাঁকে দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এমন মানবজীবন সত্যি গর্বের ও সম্মানের।
খালেদা জিয়া ছিলেন একজন ন্যায়বিচারক ও বিনয়ী ব্যক্তিত্ব। জানা যায়, শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য অতি উৎসাহী একজন সচিব মন্ত্রী রফিকুল সাহেবের টেবিলে ফাইল নিয়ে আসেন। বিষয়টি দেশমাতার কাছে পৌঁছলে তিনি মন্ত্রীকে বলেন, সচিব সাহেবকে বলবেন তিনি যেন তাঁর দায়িত্বটা ভালোভাবে পালন করেন। আরো দেখা যায়, আহমদ ছফার সঙ্গে তাঁর টেলিফোনের সংলাপ। তিনি একজন বড় মাপের, বড় মনের অধিকারী মানুষ, যাঁর তুলনা তিনি নিজেই।
দেশ যখন এক চরম ক্লান্তিকাল অতিক্রম করছে, তখন এই মুহূর্তে তাঁর অভাব দেশবাসী বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সুস্থ থাকা কতটা প্রয়োজন ছিল। আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অপর নাম দেশমাতা খালেদা জিয়া। তাঁর একটুখানি উপস্থিতি মানুষকে উজ্জীবিত করে বাঁচতে শেখায় শিরদাঁড়া উঁচু করে, যা আমরা অবলোকন করেছি সেনানিবাসের অনুষ্ঠানে।
বর্তমান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে অধিকতর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। জাতি খুশি হয়েছে। এই সম্মান ও মর্যাদা তাঁরই প্রাপ্য। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। হে আল্লাহ, বহুবিধ গুণের অধিকারী এই জননেত্রীর জন্য লাখো কোটি মানুষ চোখের পানি ফেলে যে দোয়া করছে, তা তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না। আমাদের মাঝে আমাদের মাকে ফিরিয়ে দাও। আমিন।