ঢাকা, বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অনুমতি না মেলায় বুড়িমারীতে আটকা ভুটানের পণ্য

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১৭:০২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২১ বার


অনুমতি না মেলায় বুড়িমারীতে আটকা ভুটানের পণ্য

থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ভুটানের পণ্যের প্রথম চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়ক পথে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছালেও ভারতের সড়ক পথের অনুমতি না মেলায় আটকে আছে। 

রোববার (৩০ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ভুটানের পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যানটি বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকা রয়েছে। 

এর আগে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সকালে ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাকটি কাস্টমসের স্কট নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছে। 

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের প্রথম ‘ট্রায়াল রান’ শুরু করেছে ভূ-বেষ্টিত দেশ ভুটান। বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে এই ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দারুণ উচ্ছ্বসিত হলেও, দুর্বল অবকাঠামো এবং বিশেষ করে সড়কের বেহাল দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ভুটানের পণ্যের প্রথম চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়ক পথে শুক্রবার ভোরে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছায়। তবে শুক্রবারের কাস্টমস জটিলতার কারণে ভারতে না পাঠাতে পারলেও শনিবার সকালে চালানটি ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের সড়ক পথের অনুমতি না পাওয়ায় চালানটি আটকে যায়। ভারতের কলকাতা থেকে অনুমতি নিয়ে তবে এটি চালু করার কথা। রোববার ভারতে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে লিখিত অনুমতি নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে মৌখিক অনুমতি নিয়ে প্রথম চালানটি পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। 

ভুটানের এ চালানটি বহন করা কাভার্ডভ্যানের চালক আলমগীর হোসেন বলেন, প্রায় ২০ ঘণ্টা পথ মাড়িয়ে চট্টগ্রাম থেকে বুড়িমারী পৌঁছেছি শুক্রবার সকালে। সেই থেকে আজ রোববার দুপুর গড়িয়ে গেল ভারতের অনুমতি পাইনি। ফলে বসে রয়েছি। এত বড় ক্ষতি কে পুষিয়ে দেবে জানি না। চরম দুর্ভোগে পড়েছি। কবে এ জঠিলতা কাটিয়ে উঠবে সেটাও অজানা। 

এই চালানটি ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে ভুটানের গন্তব্য ফুন্টসোলিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। চালানটি ছিল প্রায় সাড়ে ৬ টন খাদ্যপণ্য, ফলমূল এবং কসমেটিকস জাতীয় পণ্য।

তবে ট্রানজিট চালুর এই শুভ মুহূর্তেও এখানকার ব্যবসায়ীরা বন্দরটির প্রধান অবকাঠামোগত সমস্যাসহ অনুন্নত ও দুই লেন বিশিষ্ট লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়ক। তারা অভিযোগ করেছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, দীর্ঘদিনের দাবির পরেও এই সড়কটি ফোর লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হয়নি।  

ব্যবাসীয়রা জানান, ২০২৩ সালে ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরের পর, এই ট্রায়াল রানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই প্রক্রিয়া চালু হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারেরও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় হবে।

ব্যবাসায়ী নেতারা আশা করছেন এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হলে নিয়মিতভাবে ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম চালু হবে, যা উত্তরবঙ্গের বাণিজ্যে এক নতুন গতি আনবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে এই ট্রান্সশিপমেন্টের শুরু বাংলাদেশের জন্য এক নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত উন্মোচন করলেও, সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দূর করার মাধ্যমেই এই বাণিজ্যের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব। না হলে ভুটানসহ অন্য দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসার মুখ ফিরিয়ে নিবেন। তাই দ্রুত সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ শুরু করার প্রত্যাশা।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম চালুর কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসার বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এটির ফলে উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যের নতুন গতি ফিরে আসবে। 

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের সদিচ্ছায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করছেন। ভুটানের চালানটি শুক্রবার সকালে এসেছে। শনিবার সকালে স্থলবন্দরের সব কার্যক্রম করে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ভারতের সড়ক ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায় এটি আটকে আছে। আমরা সব কাজ শেষ করেছি, ভারত যে মুহূর্তে চাইবে আমরা সেই মুহয়র্তেই পাঠাতে পারব। 


   আরও সংবাদ