ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১১ বার
দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে রোডক্র্যাশজনিত মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হলে এখনই সমন্বিত ও কার্যকর একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন জরুরি। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়নে সড়ক নিরাপত্তা আইন: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা আরও জানান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য একটি অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ৩.৬) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী রোডক্র্যাশজনিত মৃত্যু ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য রয়েছে, যার জন্য বাংলাদেশকে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের রোড সেফটি ইনজুরি অ্যান্ড প্রিভেনশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার মোহাম্মদ ওয়ালী নোমান। তিনি জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়; আহত হয় আরও বহু মানুষ। বিআরটিএ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, এসব ঘটনার প্রায় ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী অতিরিক্ত গতি ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের ঘাটতি।
তিনি বলেন, গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশনে উল্লেখিত ‘সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’—নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ গতি, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও নিরাপদ যানবাহন—বাস্তবায়ন করলেই হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পদ্ধতি গ্রহণ করে মৃত্যুহার কমিয়েছে।
২০২৩ সালে সিআইপিআরবি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণা তুলে ধরে তিনি আরও জানান, রোডক্র্যাশে আহতদের বড় অংশ প্রথমে যায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে—যেখানে জরুরি চিকিৎসা প্রদানের সক্ষমতা সীমিত। হাসপাতালের শয্যার প্রায় ১৬.২ শতাংশ এসব রোগীর জন্য ব্যবহৃত হয়; একজন রোগী গড়ে ১৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকেন এবং ওষুধ, পরিবহন, খাবার ও থাকার পেছনে ব্যয় হয় গড়ে ৩১ হাজার ৬৮৩ টাকা। এতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ তৈরি হয়।
মুক্ত আলোচনায় তরুণরা বলেন, রোডক্র্যাশ তরুণদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত আইন প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়। গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পরিবহন মালিক–শ্রমিক, স্থানীয় সরকার—সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় রোডক্র্যাশে হতাহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানো সম্ভব। এজন্য নতুন স্বতন্ত্র আইন প্রণয়ন দরকার।
তিনি আরও বলেন, ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সড়কে সবচেয়ে বেশি প্রাণ হারান। অথচ তারাই আগামীর অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাই সড়ককে নিরাপদ করা জরুনি। এজন্য যা যা করা দরকার, আমরা সেটি করতে প্রস্তুত আছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, রোডক্র্যাশজনিত মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে এবং পরিবারকে আর্থিক সংকটে ফেলছে। দেশে এখনো কার্যকর পোস্ট–ক্র্যাশ রেসপন্স কাঠামো গড়ে ওঠেনি। সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮ এবং বিধিমালা–২০২২–এ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় দুর্ঘটনার পর সময়মতো সেবা নিশ্চিত করা যায় না। একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করাই এখন জরুরি।
স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রামের ম্যানেজার এম খালিদ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (এস্টেট) নিখিল কুমার দাস, জিএইচএআই–এর কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ড. মো. শরিফুল আলম, শীতাংশ বিশ্বাস, পরিচালক, রোড সেফটি; ড. নরুল ইসলাম, উপপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাইওয়ের পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টের জেনারেল হাবিবুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের রোড সেফটি প্রোগ্রামে পরিচালক ডা. মাহফুজু রহমান ও সিনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফর এবং বাংলাদেশ রোড সেফটি কোয়ালিশনের সদস্যবৃন্দ সহ আরও অনেকে। ###