ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯ বার
মোঃ নুরুন্নবী পাবনা প্রতিনিধিঃ
পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রধারী যুবক তুষার হোসেন (২১) কে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ধানবান্ধি এলাকার জে.সি. রোডের মতিন সাহেবের ঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি জানায়, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি, স্থানীয় সোর্স ও দীর্ঘ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তুষারের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ওসি ডিবি মো. রাশিদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসআই বেনু রায়, পিপিএম; এসআই অসিত কুমার বসাকসহ একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করে। তুষার ঈশ্বরদী পৌর শহরের ভেলুপাড়া মহল্লার তাহের হোসেনের ছেলে।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তুষার তার হেফাজতে থাকা একটি অবৈধ পিস্তল ও দুই রাউন্ড তাজা কার্তুজ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতে ভেলুপাড়া এলাকায় মো. রবিউল ইসলামের ফাঁকা জমিতে, মো. আতিকের ইটের প্রাচীরের পশ্চিম পাশে মাটি খুঁড়ে প্রায় ৬–৭ ইঞ্চি নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একটি লোডেড পিস্তল ও ম্যাগাজিনসহ দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
গত ২৭ নভেম্বর ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের চরগড়গড়ি আলহাজ মোড় এলাকায় জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল গণসংযোগে গেলে জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এর অনুসারী মক্কেল মৃধার নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। হামলা, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ওই ঘটনায় জামায়াতের অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
সংঘর্ষ চলাকালে তুষার মণ্ডল প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে দেখা গেলে সেই ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব দাবি করেন, “দিবালোকে তুষার মণ্ডল আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। সে জামায়াত নেতা তালেব মণ্ডলের ভাতিজা মামুন মন্ডলের ঘনিষ্ঠ সহচর।"
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডল বলেন, “অস্ত্রধারী ওই যুবকের সঙ্গে আমাদের দলের কেউ না, তার সঙ্গে দলের ন্যুনতম কোনো সম্পর্ক নেই।”
ঘটনার পর বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করে—যেখানে ৭১ জনকে নামীয় ও চার শতাধিক অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়। তুষারকে ২৯ নভেম্বর দায়ের হওয়া মামলায় (নং–৪৫) ৬ নম্বর আসামি করা হয়। তার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০–এর গুরুতর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ ছাড়াও উদ্ধার করা অস্ত্রের ঘটনায় অস্ত্র আইন ১৮৭৮–এর ১৯(এ)/১৯(এফ) ধারায় নতুন একটি মামলা (মামলা নং–০৬, তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২৫) রুজু করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার সরকার জানিয়েছেন, “যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, সংঘর্ষের সময় লুট হওয়া জামায়াত নেতাকর্মীদের দাবী করা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের মধ্যে শনিবার বিকেলে মক্কেল মৃধার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে ৯টি, গতকাল সোমবার ৭টি, আজ মঙ্গলবার ১টি এবং ঘটনাস্থল থেকে আগুনে পোড়া সহ মোট ২১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে বিএনপির দায়ের করা মামলায় গতকাল সোমবার এমপি প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল সহ সকল নেতাকর্মীর জামিন মঞ্জুর করে পাবনা আমলী আদালত।
এদিকে সংঘর্ষ–পরবর্তী টানাপোড়েন এখনও কাটেনি। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি, বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।